দেশের বাহিরে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ : যা জানা জরুরী

আরও পড়ুন

দেশের বাহিরে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ : যা জানা জরুরী
দেশের বাহিরে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ : যা জানা জরুরী

উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ বা দেশের বাহিরে যাওয়া এখন অনেক শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন। সে স্বপ্ন পূরণ করতে দরকার সঠিক গাইডলাইন, সঠিক দিক নির্দেশনা। সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে অনেক শিক্ষার্থী ই যোগ্যতা থাকার পরও সে স্বপ্ন ধরতে পারেন না। স্বপ্ন থেকে যায় স্বপ্নই! সেই স্বপ্ন বাস্তবয়নে ও দেশের বাহিরে উচ্চশিক্ষা নিতে যাবার সঠিক দিকনির্দেশনা পেতে আজকের লেখা। 

কেন বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাবেন? কিভাবে যাবেন? এবং কোন দেশে পড়তে গেলে আপনার জন্য ভালো হবে? কোন দেশে কি স্কলারশিপ আছে? স্কলারশিপ এর যোগ্যতায় বা কি? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে পুরো লেখাটি পড়ুন।

পড়াশোনার মান, কর্ম সংস্থান ও নিরাপদ জীবন যাপনের উপর যারা গুরুত্ব দেন, তারাই বিদেশী বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তি হতে চায়। বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সাধারণত ছাত্র রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকে ও খাবার মানও অনেক উন্নত হয়ে থাকে। জীবন মানের সাথে সাথে উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর পড়াশোনার মানও অনেক বেশি উন্নত। 

বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর বেশির ভাগেরই অবস্থান আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, জার্মানী, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড অবস্থিত।

এছাড়াও ফিনল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, বেলজিয়াম, মালয়েশিয়া, চায়না, ইন্ডিয়া ইত্যাদি দেশগুলোতে।

তাই আমাদের পরামর্শ থাকবে, যদি আপনার আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকে তাহলে জীবনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগটা বিদেশে পড়া লেখার জন্যই করুন। আর যদি স্কলারশিপ পেয়ে যান, তাহলে তো সোনায় সোহাগা।


কিভাবে বিদেশে স্টুডেন্ট ভিসা পাবেন: 

আপনি দেশের বাহিরে যেখানেই পড়তে যেতে চান, তার জন্য আপনার নিজেকে আগে প্রস্তুত করতে হবে। প্রস্তুতি বলতে শুধু ভাল ফলাফল না, বরং আপনি যে দেশে যেতে চান সে দেশ সম্পর্কে জানতে হবে। সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে হবে। আর্থিক আয় ও ব্যয়ের হিসাব জানতে হবে। আপনি যে বিষয়ে পড়তে যেতে চান সে বিষয় এর বর্তমান বিশ্বে কর্মসংস্থান কেমন তা জানতে হবে।

তারপর হচ্ছে এর পরের ধাপ, মনে করুন আপনি আপনার বিস্ববিদ্যালয় ও বিষয় পছন্দ করলেন, সে দেশ সম্পর্কেও জানলেন। এখন আপনাকে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন পাঠাতে হবে। তারপর আপনার আবেদনে যদি আপনার বিশ্ববিদ্যালয় সন্তুষ্ট হয় তাহলে আপনাকে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রাথমিক অনুমতি জানিয়ে চিঠি দিবে। প্রাথমিক ভর্তির অনুমতি জানিয়ে যে চিঠি দেয় তাকেই বলে অফার লেটার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত অফার লেটার প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বার বার পড়তে হবে। ভালভাবে জেনে নিন টিউশন ফির পরিমাণসহ অন্যান্য বিষয়।

দেশের বাহিরে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ : যা জানা জরুরী
দেশের বাহিরে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ : ছবি - প্রতীকী

বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য করণীয়:

স্কলারশিপের জন্য দরকার হল, ভালো রেজাল্ট, ভাষা দক্ষতা, সময়মত পরিকল্পনা গহন ও নিরলস প্রচেষ্টা। এ কয়টি জিনিসই বিদেশে উচ্চশিক্ষা বৃত্তি পাওয়ার পূর্বশর্ত। এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করলেই স্কলারশিপ খুব সহজেই হাতের নাগালে চলে আসবে। অন্যথায় পণ্ডশ্রমই করে যেতে হবে। তখন স্কলারশিপ নামক সোনার হরিণ আর ধরা দেবে না। মনে রাখতে হবে যে শিক্ষার্থী দেশে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য যোগ্য সে বিদেশেও বৃত্তি পাওয়ার যোগ্য। রেজাল্ট খারাপ, ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা নেই এমন শিক্ষার্থীর জন্য কিন্তু ফুল স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভনা কম। তবে সে আংশিক স্কলারশিপ পেতে পারে।মূলত দেখার বিষয় হল, সংশ্লিষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ উচ্চশিক্ষা বৃত্তির জন্য যা চায় আপনার তা আছে কিনা।

আর হ্যা, অবশ্যই আপনাকে যে দেশে বা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে চান সে দেশ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করতে হবে। এবং খেয়াল রাখতে হবে কখন তারা উচ্চশিক্ষা বৃত্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।


উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যেতে ভাষা দক্ষতা: 

এর পর আপনার যা লাগবে সেটি হল ভাষার দক্ষতা। আপনি যে দেশে যেতে চান, যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান সেখানের পড়াশোনার কারিকুলাম কি ইংলিশে নাকি সে দেশের নিজ ভাষায় তা জানতে হবে। কারণ অনেক ক্ষেত্রে কোরিয়া বা জার্মানির মত দেশগুলোতে তাদের নিজস্ব ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা হয়ে থাকে। তাই আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভাষার দক্ষতা কি চায় তা জানতে হবে।

$ads={1}

সাধারণত আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশগুলোর প্রধান ভাষা যেহেতু ইংরেজি তাই সে সব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইংরেজিতে দক্ষ শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিয়ে থাকে।

সুতরাং বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রয়োজন ভাষাগত দক্ষতা। আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে প্রায় পৃথিবীর সব দেশেই ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশোনা করা যায়। তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ইংরেজী বিষয়ে দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। এমকি দেশেও প্রায় সকল সাবজেক্টে ইংরেজিতে পড়তে এবং লিখতে হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মাত্রায় স্কোর চাওয়া হয়। তবে বেশিরভাগই আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর ৫.৫ থেকে ৬.৫। এবং টোফেল (TOEFL) স্কোর ৬০ থেকে ১০০ পর্যন্ত চায়। এছাড়াও কোন কোন ক্ষেত্রে জিআরই (GRE) অর্থাৎ- Graduate Record Examination, জিম্যাট (GMAT) অর্থ্যাৎ Graduate Management Admission Test, নিউস্যাট (NEWSAT) ইত্যাদি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়ে থাকে।

দেশের বাহিরে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ : যা জানা জরুরী
দেশের বাহিরে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ : ছবি - প্রতীকী


বিদেশে উচ্চশিক্ষায় খরচ:

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রথমেই যেটির দরকার তা হচ্ছে আর্থিক সঙ্গতি। তাই প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নিন, আপনার পরিবারের সে আর্থিক সঙ্গতি আছে কি না। আপনার ভর্তি ও অন্যান্য ব্যয়ভার আপনার পরিবার বহন করতে পারবে কি না। এছাড়া যদি অন্য কেউ আপনার ব্যয়ভার বহন করে তাহলে তার সঙ্গে আপনার রক্তের সম্পর্ক কি না তা নিশ্চিত হোন । কারণ, ভিসা অফিসের অফিসার চান শিক্ষার ব্যয়ভার বহনকারীর সঙ্গে যেন শিক্ষার্থীর রক্তের সম্পর্ক থাকে। এবং আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণস্বরূপ প্রতিটি দূতাবাসেই ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়। যা সংশ্লিষ্ঠ ব্যাংক থেকে গ্রহণ করতে হয়। দূতাবাসের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদানও করতে হয়।


বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য কোন দেশের স্টুডেন্ট ভিসা নেবেন:

আপনি বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পাবেন কিনা তার উপর ভিত্তি করে দেশ নির্বাচ করুন। কারণ বিদেশে পড়ালেখার সাথে ব্যায়ের সম্পর্ক রয়েছে। যদি স্কলারশিপ পেয়ে যান, তাহলে বিশ্বের এক নম্বর দেশের ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিং এ এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে অসুবিধা নাই। কিন্তু যদি স্কলারশিপ না পান। অথবা আংশিক স্কলারশিপ পান সেক্ষেত্রে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ি দেশ নির্বাচন করা উচিৎ। কারণ, আমেরিকায় সাধারণত গ্রাজুয়েট সমপর্যায়ে পড়াশোনা করতে বছরে প্রায় বিশ লাখ টাকার মত লাগে। কানাডায় বছরে প্রায় পনের লাখ টাকার মত লাগে।

অস্ট্রেলিয়া বা যুক্তরাজ্যেও প্রায় পনেরো থেকে আঠারো লাখ টাকার মত খরচ হয়ে থাকে বছরে। আর মালয়েশিয়া, চায়না ও ইন্ডিয়ার মত দেশগুলোতে মোটামুটি বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মতই পড়াশোনার খরচ হয়ে থাকে।


বিদেশে উচ্চশিক্ষায় সঠিক কোর্স নির্বাচন:

গ্রাজুয়েট, পোস্ট গ্রাজুয়েট ও পিএইচ.ডি ডিগ্রীসহ উচ্চতর সকল প্রোগ্রামেই কোর্স নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান গ্লোবালাইজেশনের যুগে উচ্চশিক্ষার অনেক কোর্সের মধ্যে আপনাকে এমন একটি কোর্স নির্বাচন করতে হবে যা আপনার ভবিষ্যৎ পেশাগত দক্ষতার পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে গণ্য হবে।

তাছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি একেবারে একটি নতুন বিষয়ও বেছে নিতে পারেন। আমাদের দেশে প্রচলিত নয় কিন্তু বিশ্ব প্রেক্ষাপটে গুরত্বপূর্ন এবং চাহিদা সম্পন্ন এরকম কোন বিষয়কেও আপনি পছন্দ করতে পারেন। তবে সাধারণত বিদেশের পাশাপাশি আমাদের দেশেও যথেষ্ট চাহিদা আছে এরকম কোন কোর্স/বিষয়কে উচ্চশিক্ষার জন্য নির্বাচন করায় ভাল।


বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং:

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পর তাদের পাঠানো অফার লেটার বা ভর্তির অনুমতিপত্রে উল্লেখিত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানে পৌছাতে হবে। অন্যথায় ভর্তি বাতিল হবে। তাই নির্দিষ্ট তারিখের পূর্বে আপনাকে সেদেশের ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও প্রায় সব নিয়মই এক রকম। কোন  দেশে ভিসা পেতে হলে প্রথমে সে দেশের ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হয়।

কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ভিসার আবেদনপত্র সরবরাহ করে থাকে। তা না হলে নির্দিষ্ট দূতাবাস থেকে ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করে সঠিক তথ্য দিয়ে নির্ভুল ভাবে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রসহ দূতাবাসে জমা দিতে হবে এবং নির্দিষ্ট দিনে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। ভিসার জন্য সাধারনত যে সব কাগজপত্র লাগে-

  • শিক্ষাগত কাগজপত্রঃ সনদপত্র, নম্বরপত্র, প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রশংসাপত্রের সত্যায়িত ফটোকপিসহ মূলকপি।
  • পাসপোর্টঃ পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ১ বছর থাকতে হবে এবং পেশা, জন্ম তারিখ ও অন্যান্য সকল তথ্যের সাথে শিক্ষাগত কাগজ পত্রের মিল থাকতে হবে। আপনার পাসপোর্ট করা না থাকলে পাসপোর্ট করে নিন।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রমানপত্র বা অফার লেটার।
  • আর্থিক সামর্থ্যের প্রমানপত্রঃ আবেদন ও ভর্তি প্রসেসিং অংশে এ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখে নিন।
  • ছবিঃ সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে, পরিস্কার ভদ্র পোশাকে তোলা স্মার্ট ও স্পষ্ট ছবি হলে ভাল হয় এবং রঙ্গিন হওয়াই উত্তম।
  • টিউশন ফি’র ব্যাংক ড্রাফটঃ প্রতিষ্ঠান ভেদে টিউশন ফি ভিন্ন হয়ে থাকে।
  • ভাষাগত দক্ষতার প্রমানপত্রঃ IELTS বা TOEFL বা অন্য ভাষাগত দক্ষতার সার্টিফিকেট, যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন।
  • পুলিশ ছাড়পত্রঃ পুলিশ ছাড়পত্রের জন্য নিজ নিজ থানায় যোগাযোগ করে একটি নির্দিষ্ট ফি প্রদানের মাধ্যমে এটি সংগ্রহ করা যায়। তবে আপনার বিরুদ্ধে দেশ ও আইনবিরোধী কন কাজে জরিত থাকের অভিযোগ থাকলে আপনি পুলিশ ছাড়পত্র পাবেন না।


বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যে সব দেশে বেতন নেই: 

বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইউনিভার্সিটিগুলোতে নাম মাত্র ব্যয়ে অথবা বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে জার্মানীতে। জার্মান সরকার তাদের বাজেটের একটি বিরাট অংশ ব্যয় করে শিক্ষাখাতে। তাই এখানে স্কলারশিপসহ অনেক ভালো মানের শিক্ষা লাভ করা যায় কোন টিউশন ফি ছাড়াই। আপনি যদি স্কলারশিপ নাও পান, তবুও গ্রাজুয়েট কোর্সের জন্য প্রতি বছর মাত্র ৩৫০০ ডলার খরচ হবে।

উত্তর পূর্ব ইউরোপের স্ক্যান্ডেনেভিয়ান পাঁচটি দেশ (ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন) এ দেশ গুলোতেও ভাল সুযোগ সুবিধা নিয়ে পড়ালেখা করা যায়। যেমন, নরওয়েতে বিশ্বমানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি স্তরের উচ্চশিক্ষা একদম ফ্রি, সেক্ষেত্রে নরওয়েজিয়ান ভাষায় দক্ষতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডেও বিভিন্ন স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে । এ সব বৃত্তির মাধ্যমে বিনামূল্যে পড়ালেখা ছাড়াও থাকা-খাওয়ার জন্য বৃত্তি পাওয়া যায়। তবে এসব সুবিধা সাধারণত স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি ডিগ্রীর জন্য দেওয়া হয়।


বিদেশে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজের সুযোগ:

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য পার্টটাইম কাজের সুবিধা আছে। এ সুবিধাটি আমাদের মতো দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই প্রয়োজন। সেসব দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা (ঘণ্টাভিত্তিক পারিশ্রমিক সুবিধায়) কাজ করার সুবিধা আছে। এ সুবিধা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার খরচের একটা বড় অংশের যোগান দেয়। সে দেশে যাওয়ার পরই এসব সুবিধা গ্রহণের পথ খুঁজে পাবেন।

দেশের বাহিরে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ : যা জানা জরুরী
উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ : ছবি - প্রতীকী

বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। আছে স্কলারশিপ এর ও ব্যবস্থা। প্রতি বছর ই অন্তত কয়েক হাজার শিক্ষার্থী দেশের বাহিরে যায় উচ্চশিক্ষার জন্য। বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়া এমনই কিছু দেশের কথা জানাবো আজ আপনাদের। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কোন দেশে, কিভাবে যেতে পারবেন উচ্চশিক্ষার জন্য-


কানাডায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ:

বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বর্তমানে কানাডায় উচ্চশিক্ষা একটি স্বপ্ন। কারণ, কানাডার আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক কম তাদের প্রচুর মানব সম্পদ দরকার এজন্য লেখাপড়া শেষ করে পার্মানেন্ট হওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। শুধু তাই নয় কানাডায় পড়াশোনা চলাকালীন পার্ট টাইম জব করার সুযোগও রয়েছে। 

তবে পার্ট টাইম জব করে পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব কি না? কানাডায় যাওয়ার জন খরচ কেমন লাগবে? কোন প্রদেশে পড়াশোনা করা ভালো, থাকা খাওয়ার খরচ কেমন? এ বিষয় গুলো কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগেই জেনে নিতে হবে। আর তা না হলে কানাডা যাওয়ার পর বিপদেও পড়তে পারেন। তাই গিয়া ভাবভার আগে ভাবিয়া কানাডা যান।

$ads={2}

যুক্তরাষ্ট্রের স্টুডেন্ট ভিসায় উচ্চশিক্ষা সুযোগ:

আইএলটিএস ছাড়াই সরাসরি ইউকেতে গ্রাজুয়েশন পোস্ট গ্রাজুয়েশন করা সম্ভব একটি ব্যাপার। এবং প্রসেসিংয়ের সময় মাত্র দুই মাস।


অস্ট্রেলিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ:

এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে ওশেনিয়া অঞ্চলে অবস্থিত বারো হাজারেরও বেশি সমুদ্র সৈকত বিশিষ্ট, অর্থনীতিতে সমৃদ্ধশালী, খেলাধূলায় অগ্রসর এই দেশটি তরুণ শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। তাছাড়া দেশটি শিক্ষাব্যবস্থা, গবেষনা, উদ্ভাবন, জীবনযাত্রার মান ও বসবাসের দিক থেকে সেরা। আর সব মিলিয়ে অন্যতম শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবেও বিবেচিত অস্ট্রেলিয়া। তাই তো প্রতি বছর পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে সাত থেকে আট লক্ষাধিক শিক্ষার্থী পাড়ি জমায় অস্ট্রেলিয়াতে। অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ অনেকটা ব্যয় বহুল হলেও স্কলারশিপ নিয়ে এই দ্বীপ দেশটিতে পাড়ি জমাতে পারেন আপনিও। 


মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ:

মালয়েশিয়া স্বল্প খরচে থাকা ও পড়াশোনার জন্য অন্যতম একটি দেশ। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর বেস্ট স্টুডেন্ট সিটিজ ক্যাটাগরিতে ২০১৬ সবচেয়ে সাশ্রয়ী শহরের মর্যাদা লাভ করেছে। মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষার মান খুবই উন্নত। মালয়েশিয়া থেকে লেখাপড়া করে পৃথিবীর যেকোন দেশে চাকুরী অথবা পরবর্তী পর্যায়ের লেখাপড়ার জন্য যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

মালয়েশিয়ায় কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, এমবিবিএস, বিবিএ, এম.বিএ. পিএইচ.ডিসহ প্রায় সকল বিভাগে পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে।


চায়নাতে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশীপ:

চায়নাতে ১ থেকে ৫০০ এর মধ্যে অবস্থিত অবস্থিত সকল ইউনিভার্সিটি তে স্টাডি করতে পারেন এবং চায়নার লিভিং কস্ট বাংলাদেশের মতোই। আপনি সেখানে থাকলে চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ এবং চাইনিজ কালচার এবং খাবার-দাবার রপ্ত করতে পারবেন এবং যেটি পরবর্তীতে আপনার জীবন চলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজে লাগবে। ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ এবং সংস্কৃতি খুবই গুরুত্ববহ। চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ জানা থাকলে আপনি চায়নার বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে চাকরি করতে পারবেন এবং বাংলাদেশও অনেক চাইনিজ কোম্পানি এবং চাইনিজ বিনিয়োগ এবং চাইনিজ অফিসার রয়েছে এবং আপনার চাইনিজ ভাষা জানলে সেগুলোতে কাজ করতে পারবেন। অথবা তাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবেন।


ভারতে উচ্চকশিক্ষা ও স্কলারশিপ:

ভারত বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী ও বন্ধু প্রতীম দেশ। তাই ভারতীয় সরকার থেকে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা। এছাড়া বেসরকারী বিশশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তির ব্যবস্থা কম থাকলেও ভাল ফলাফল সাপেক্ষে আংশিক স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ

ইউরোপ কিংবা আমেরিকার তুলনায় অনেক কম। অনেকটা বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সমমানের খরচ হয়ে থাকে ভারতের এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাছাড়া থাকা খাওয়ার খরচও অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক সস্তা। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়েও খাবার খরচ কম। ভারত বাংলাদেশের সংস্কৃতির ও রয়েছে অনেক মিল। তাই আপনি চাইলেই উচ্চশিক্ষার জন্য ভারতে কোন বিশ্ববিদ্যালয় কেও বেছে নিতে পারেন। 


অস্ট্রিয়ায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ:

আইনস্টাইন যে শহরে পড়ালেখা করেছেন অস্ট্রিয়ার রাজধানী সেই ভিয়েনা বিশ্বের অন্যতম শিক্ষার্থীবান্ধব শহর বলে বিবেচিত। এ দেশটিতে পড়াশোনা করা যায় অপেক্ষাকৃত কম খরচে। ইউরোপীয়দের জন্য যেখানে সেমিস্টার ফি ৪৫০ ডলার, সেক্ষেত্রে অন্যদের জন্য ৭০০ ডলারের মতো, যা উন্নত অনেক দেশের তুলনায় কম।


তাইওয়ানে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ:

এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানও শিক্ষার দিক দিয়ে বেশ অগ্রসর। দেশটিতে লিবারেল আর্টসের যে কোনো বিষয়ে পোস্টগ্র্যাজুয়েট করতে প্রায় ৩ হাজার ইউএস ডলার লাগে। তা ছাড়া জীবনযাত্রার খরচও তুলনামূলক অনেক কম। প্রতিবছর আবাসনের পেছনে গড়ে ২ হাজার ৩৩০ ইউএস ডলার ব্যয় হয় এই দেশটিতে। বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে দেশটির বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থী বান্ধব শহরের মধ্যে শীর্ষ ২০ এর একটি তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে। এছাড়া তো আছেই সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামমাত্র খরচে পড়ালেখার সুযোগ ও স্কলারশিপ।


ইতালিতে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ:

ইতালিতে একাডেমিক সাফল্যের সাথে বিভিন্ন যোগ্যতাকেও প্রাধান্য দিয়ে ছাত্রবৃত্তি, লোন, বেতন হ্রাসের ব্যবস্থা করে তারা। থাকা-খাওয়ার জন্য খরচ ইউরোপীয় দেশের তুলনায় বেশি। এখানে বছরে ১৪ হাজার ডলারের মত লাগে। রাজধানী রোম, বিখ্যাত শহর মিলান ছাড়াও আরো বেশ কিছু শহরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়সূহ বাংলাদেশ ও ভারতের শিক্ষার্থীদের জন্য পছন্দের জায়গা।


গ্রিসে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ:

গ্রিসে সরকারী ইউনিভার্সিটিতে বিনা টিউশন ফিতে বা অল্প খরচে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। তবে সেটা ব্যাচেলর লেভেলে, মাস্টার্সে নয়। কিন্তু ব্যাচেলর প্রোগ্রামের বেশিরভাগই গ্রীক ভাষায় অধ্যায়ন করতে হয়। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স পর্যায়ে ইংরজিতেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে।


পোল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ:

আপনি যদি পোলিশ ভাষায় পারদর্শী হন এবং পোলিশ ভাষায় আপনার কোর্স এনরোল করেন, তাহলে অন্য সকল পোলিশ শিক্ষার্থীর মতো আপনিও বিনামূল্যে অধ্যায়ন করতে পারবেন। ইংরেজিতেও আপনার ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ আছে এই দেশটিতে। তবে, সেক্ষেত্রে আপনার প্রতি বছরে প্রায় ২ হাজার ১৮৫ থেকে ৩ হাজার ২৮০ ইউএস ডলার ব্যয় হবে।


স্টুডেন্ট ভিসা ২০২২ চেক লিস্ট:

বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার আগে নিচের বিষয় গুলো সম্পন্ন করেছেন কিনা, মিলিয়ে নিন। আর তা না হলে বিপদেও পড়তে পারেন। অতএব মনোযোগ সহকারে নিচের অংশটি পড়ুন-

  • প্রথমেই আমি বলবো, ইংরেজীতে দক্ষতা অর্জন করার কথা। তবে চীন, জাপান, জার্মানী, ফ্রান্স এসব দেশে যেতে চাইলে ঐ দেশের ভাষাটা শিখে নেয়া ভালো। প্রয়োজনে GRE, SAT, GMAT বা TOFEL প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
  • এছাড়া, সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট ইংরেজীতে করিয়ে নিতে হবে।
  • পাসপোর্টে যাতে কোন সমস্যা না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট হওয়া দরকার। 
  • যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান তার খরচ জোগার করা। যদি কর্তৃপক্ষ মনে করে ব্যয়ভার বহন করা শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব নয়, তাহলে ভিসা মিলবে না।
  • কোন এডুকেশন কনসালটেন্সি ফার্মের মাধ্যমে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চাইলে আগে তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন