উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যাত্রা : আমেরিকায় পড়তে যাবার আদ্যোপান্ত

আরও পড়ুন

উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যাত্রা : আমেরিকায় পড়তে যাবার আদ্যোপান্ত
আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ

বিশ্বে আমেরিকান শিক্ষা ব্যবস্থা সবচেয়ে শক্তিশালী। দেশটির জিডিপির ৭.৬% খরচ করে থাকে শিক্ষা ব্যবস্থার পেছনে। দেশটি বেস্ট এডুকেশন কান্ট্রি হিসাবে ৮০টি দেশের মধ্যে ৭ নম্বরে অবস্থান করছে। আমেরিকা আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম নম্বরে অবস্থান করছে। প্রতি বছর দেশটিতে প্রায় ৯ লাখেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমায়। তাই আপনিও যদি আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চান তাহলে সবার আগে সঠিক তথ্য জানতে হবে। তাই আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার আদ্যোপান্ত জানতে পড়ুন আজকের লেখাটি-


আমেরিকায় (USA) কেন  পড়তে যাবেন?

আমেরিকান শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষাব্যবস্থাগুলোর একটি। বেশির ভাগ কলেজেই দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত কোন সাবজেক্টে ডিগ্রি নেবেন বা মেজর করবেন তা বাছাই করতে হয় না। পছন্দমতো কোর্স নিয়ে পড়ে নিজেকে নির্ধারণ করতে হয় যে কোনটা পড়তে ভালো লাগছে। যেমন আপনি একই সঙ্গে কম্পিউটার সায়েন্স ও হিস্ট্রি পড়তে পারবেন। আমেরিকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২-২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে একেকটি ক্লাস পরিচালনা করা হয়। এর ফলে প্রত্যেক শিক্ষার্থী আলাদাভাবে শিক্ষকের মনোযোগ পান। এর পাশাপাশি এখানে হাতেকলমে শিক্ষার ওপর অনেক বেশি জোর দেওয়া হয়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীই এক বা একাধিক ইন্টার্নশিপ বা বিভিন্ন ফিল্ড প্রজেক্টের সুযোগ পান।

$ads={1}

বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হলো খরচ বহন করা। এ প্রক্রিয়াটি অনেক ব্যয়বহুল হলেও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ সারা বিশ্বের সীমিতসংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থীকে তাঁদের ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্য নানা রকম স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। মেধা ও প্রয়োজন অনুসারে এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে।

বড় সংখ্যার বৃত্তি পেলে প্রায় বিনা মূল্যে বা অনেক কম খরচেই পড়াশোনা করা যায়। তাই মধ্যবিত্তরাও বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখতে পারেন।

উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যাত্রা : আমেরিকায় পড়তে যাবার আদ্যোপান্ত
আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ : ছবি সংগৃহীত

আমেরিকায় পড়তে যাবার জন্য নূন্যতম যোগ্যতা:

তাহলে চলুন আমরা প্রথমেই জেনে নেয়, আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম এ স্কলারশিপ পেয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমাতে হলে আপনার কি ধরনের যোগ্যতা বা কাগজাদির দরকার হবে। 

আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম বা ব্যাচেলর ডিগ্রীতে আবেদনের জন্য আপনাকে সেকেন্ডারী লেভেল অর্থাৎ এইচএসসি বা A লেভেল উত্তীর্ণ হতে হবে। এক্ষেত্রে এই পর্যায়ে আপনার ভালো গ্রেড থাকতে হবে। আর ভালো গ্রেড আপনার ভালো সাব্জেক্টে ভালো ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ পাবার পথকে অনেকটা এগিয়ে দিবে। এবার আসি গ্র্যাজ্যুয়েট লেভ্লের ক্ষেত্রে গ্রেড বা সিজিপিএ এর ভূমিকা নিয়ে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের রিকোয়ারমেন্ট বেইস লাইন হিসেবে কতৃপক্ষ কতৃক একটা নির্দিষ্ট সিজিপিএ উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ নুন্যতম কতটুকু সিজিপিএ থাকলে কোনো শিক্ষার্থী ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐ প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবে সেটি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ক্ষেত্রে সিজিপিএ কত থাকতে হবে? মূলত আপনার যদি সিজিপিএ ৩.০০ বা এর বেশি থাকে তবে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। তবে আপনার সিজিপিএ যদি এর কমও হয় তাহলে সেক্ষেত্রেও সম্ভাবনা কম হলেও সুযোগ পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সিজিপিএ কখনোই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না যদি আপনার বাকি কয়েকটা দিক ভালো থাকে। আমেরিকায় যাবার জন্য বা স্কলারশিপ পাবার ক্ষেত্রে সিজিপিএ ছাড়াও যে জিনিস গুলো দরকার হয় তা হলো- 

১। GRE/GMAT,

২। IELTS/TOEFL,

৩। Letter of Recommendation (LOR)

৪। Resume

৫। Statement of Purpose (SOP)

মূলত এই প্যারামিটার গুলোতে ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে আপনি সিজিপিএ এর বাধাকে অতিক্রম করতে পারবেন। 

যেহেতু আপনার পড়াশোনার পুরোটাই ইংলিশে হবে তাই আপনার ইংরেজীতে রিটেন এবং ওরাল কমিউনিকেশনের ক্ষমতা সম্পর্কেও ইউনিভার্সিটির অবগত হওয়া লাগবে। তাই আপনার IELTS বা TOEFL এ ভালো স্কোর থাকাটা জরুরী। IELTS বা TOEFL মুলত ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট। আপনি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম কিংবা গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম যেটির জন্যই যেতে ইচ্ছুক হন না কেন ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট টা আবশ্যক। মূলত আপনার ইংরেজী রিডিং, রাইটিং, লিসেনিং, স্পিকিং ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শীতা এই এক্সামের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। এক্ষেত্রে আপনি IELTS বা TOEFL যে কোনো এক্সাম দিতে পারেন। দুটিই সমান গুরুত্ব বহন করে বর্তমানে। অনেকক্ষেত্রে রিকোয়ারমেন্টে TOEFL এ ন্যূনতম ৯০ কিংবা IELTS এ ন্যূনতম ৭ বা এরকম স্কোর উল্লেখ করে দেওয়া হয়। তাই পছন্দসই ইউনিভার্সিটিতে অ্যাডমিশন পাবার জন্য ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট এ ভালো ফলাফল আবশ্যক।

গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম এর ক্ষেত্রে GRE বা GMAT আবশ্যক। বিজনেস স্কুল এর ক্ষেত্রে GMAT লাগে। আর অন্য সব ক্ষেত্রে GRE লাগে। GRE বা GMAT এই এক্সামে যদি আপনি ভালো স্কোর উঠাতে পারেন, তবে অ্যাডমিশন এবং ফান্ডিং/স্কলারশীপ জোগাড় করা আপনার জন্য অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে GRE এর স্কোর ৩০০ এর উপর থাকা দরকার। এই পরীক্ষাটির মাধ্যমে মূলত আপনার গাণিতিকভাবে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা এবং ইংরেজিতে রিডিং স্কিল খুব ভালোভাবে যাচাই হয়।  আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম এর ক্ষেত্রে SAT বা Scholastic Assessment Test দিলেও চলে। এক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটি ভেদে জেনারেল এসএটি/এসএটি-১ এর পাশাপাশি সাবজেক্ট এসএটি পরীক্ষায় অবতীর্ণ করার প্রয়োজনও হয়ে থাকে। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ন জিনিষ হচ্ছে, Essay বা Personal Statement। আপনি আমেরিকার যে ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করতে চাচ্ছেন, ঐ ইউনিভার্সিটির জন্য কেন নিজেকে যোগ্য মনে করছেন এবং আপনার যোগ্যতা ও দক্ষতা গুলো রচনা আকারে উপস্থাপনই হচ্ছে  Essay বা Personal Statement। এক্ষেত্রে যথাসম্ভব গুছানো এবং চমৎকার একটি  Personal Statement তৈরিতে আপনাকে মনোযোগ দিতে হবে।

$ads={2}

এছাড়াও আপনার আরো একটি আবশ্যকীয় ডকুমেন্ট থাকা প্রয়োজন, আর তা হলো LOR বা Letter of Recommendation। অর্থাৎ আপনার নিকটতম কোনো শিক্ষক কতৃক আপনার জন্য সুপারিশ। সহজভাবে বললে ব্যাপারটা হচ্ছে, আপনার কাছের কোনো শিক্ষক আপনাকে কোন দৃষ্টিতে মূল্যায়ণ করে, সে সম্পর্কিত একটি Letter। এক্ষেত্রে এই  Letter of Recommendation আপনি আপনার কলেজের কোনো লেকচারার বা প্রিন্সিপালের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। এবং এই সুপারিশকারীর সংখ্যা তিন জন হতে হবে। পাশাপাশি extra curricular activities এবং কম্পিউটার চালানোর দক্ষতা গুলো কিছুটা থাকা দরকার। এছাড়াও আপনার দরকার সুন্দর একটা সিভি বা রিজিউমি, ব্যাংক সল্ভেন্সি ডকুমেন্টস, পাসপোর্ট, হেলথ সার্টিফিকেট, শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট।। এ কথা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম কিংবা গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম সব ক্ষেত্রেই সমান ভাবে প্রযোজ্য।

আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম কিংবা গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম এর ক্ষেত্রে গবেষণার অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক নয়। তবে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম তথা মাস্টার্স কিংবা পিএইচডির জন্য গবেষনার অভিজ্ঞতা থাকাটা অনেক উপকারী। কারণ যদি আপনার কোনো পেপার পাবলিশ থাকে, তবে তা এডমিশন কমিটির কাছে আপনার গুরুত্বটা বাড়িয়ে দিবে। যা আপনার স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনাটাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে। 

উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যাত্রা : আমেরিকায় পড়তে যাবার আদ্যোপান্ত
আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ : ছবি সংগৃহীত

আমেরিকায় যে সব ডিগ্রি নিয়ে পড়তে পারেন:

আমেরিকায় সাধারণত ব্যাচেলর ডিগ্রী, মাস্টার্স ডিগ্রী, ডক্টরেট ডিগ্রী এই তিন ধরনের ডিগ্রী নিয়ে পড়া যায়। এবং আমেরিকায় এ সকল ডিগ্রীতে স্কলারশিপের সুযোগ-সুবিধা কম-বেশি রয়েছে। আমেরিকার এই সমস্ত ডিগ্রীর পাশাপাশি আরেকটি ডিগ্রীও আছে, সেটি হলো এসোসিয়েট ডিগ্রী। মূলত মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে  এই এসোসিয়েট ডিগ্রীতে ভর্তি হওয়া যায়। এই কোর্সের মেয়াদকাল ২ বছর। তবে বাংলাদেশ থেকে খুব একটা শিক্ষার্থী এই প্রোগ্রামে আমেরিকায় যায় না। আমেরিকায় ব্যাচেলর ডিগ্রী, মাস্টার্স ডিগ্রী, ডক্টরেট ডিগ্রী এই তিনটি কোর্স বা ডিগ্রী মূলত দুটি প্রোগ্রামের অন্তর্গত। একটি হলোঃ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম এবং আরেকটি হলোঃ গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম। 

ব্যাচেলর ডিগ্রী মূলত আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম এর অন্তর্গত। আর মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম মূলত গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম এর অন্তর্গত। 


আমেরিকায় মাস্টার্স করতে চাইলে :

দেশটিতে উচ্চশিক্ষা (আন্ডার গ্রাজুয়েশন ও গ্রাজুয়েশন) নিতে গেলে অবশ্যই আপনাকে তাদের ইউনিভার্সিটি বা কলেজের শর্তাবলী পূরণ করতে হবে।

 ১। বাংলাদেশে আপনার ১৬ বছরের পড়াশোনা থাকতে হবে। অর্থাৎ আন্ডার গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন হতে হবে। এক্ষেত্রে যদি বাংলাদেশে আপনার পড়াশোনা ১৫ বছর হয়। অর্থাৎ এইচএসসির পর ৩ বছর মেয়াদী কোন ডিপ্লোমা করে থাকেন, তাহলে আমেরিকায় আপনি প্রি-মাস্টার প্রোগ্রামের আবেদন করতে পারেন। 

২। টোফেল আই.বিটি (ইন্টারনেট বেসড টেস্ট) থাকতে হবে। টোফেলের সর্বোচ্চ স্কোর ১২০। ইউনিভার্সিটিতে সরাসরি ভর্তির জন্য স্কোর ৭৯-৯৫ এর মধ্যে থাকতে হবে। অনেক ইউনিভার্সিটি টোফেলের পরিবর্তে আইইএলটিএস গ্রহণ করে থাকে। যদি আপনি কোনোটাই না করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনাকে ইএসএল (ইংলিশ অ্যাজ সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ) প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হবে।

৩। ইউনিভার্সিটিতে সরাসরি অফিসিয়াল ট্রান্সকিপ্টস পাঠাতে হবে। 

৪। ২ জন ডিপার্টমেন্টাল শিক্ষকের কাছ থেকে রিকমেন্ডশন বা সুপারিশনামা লেটার নিতে হবে। 

৫। ইন্টারেস্ট লেটার বা কভার লেটার দিতে হবে। 

৬। আমেরিকার অনেক ইউনিভার্সিটিতে জিম্যাট (গ্রাজুয়েশন ম্যানেজমেন্ট এডমিশন টেস্ট) ও জিআরই (গ্রাজুয়েশন রেকর্ড এক্সামিনেশন) অথবা স্যাট (স্কলাস্টিক অ্যাপটিটিউট টেস্ট) চাওয়া হয়।

উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যাত্রা : আমেরিকায় পড়তে যাবার আদ্যোপান্ত
আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ : ছবি সংগৃহীত

আমেরিকায় ব্যাচেলর প্রোগ্রাম পড়তে চাইলে:

১। বাংলাদেশে আপনার ১২ বছরের পড়াশোনা থাকতে হবে। অর্থাৎ এইচএসসি পাস করতে হবে। 

২। টোফেল আই.বিটি (ইন্টারনেট বেসড টেস্ট) থাকতে হবে। টোফেলের সর্বোচ্চ স্কোর ১২০। ইউনিভার্সিটিতে সরাসরি ভর্তির জন্য স্কোর ৬৮-৮০ এর মধ্যে থাকতে হবে। অনেক ইউনিভার্সিটি টোফেলের পরিবর্তে আইইএলটিএস গ্রহণ করে থাকে। যদি আপনি কোনোটাই না করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনাকে ইএসএল (ইংলিশ অ্যাজ সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ) প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হবে। 

৩। একাডেমিক ভালো রেজাল্ট থাকতে হবে। যাতে ওই ইউনিভার্সিটি বা প্রতিষ্ঠান খুব সহজেই বুঝতে পারে আপনি তাদের প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ফলাফল করতে সক্ষম হবেন।


আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য কোর্স বাছাই ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন:

বিশ্বে অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকায় অবস্থিত। তাইতো, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ লোক বিদ্যার্জনের আশায় পাড়ি জমায় আমেরিকায়।

আমেরিকায় আবেদন করার সময় অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ভালো করে দেখে নেয়ার চেষ্টা করবেন। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও র‍্যাঙ্কিং বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটের উপর নির্ভর করা উচিত নয়। অনেক সময় ওয়েবসাইটে কিছু অসামঞ্জস্য তথ্য দেওয়া থাকে- যা শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে। অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক টাকা খুইয়ে ফেলেন। তাই, সবসময় বিভিন্ন সোর্স থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সমন্ধে জানার চেষ্টা করুন। আর গুগল সার্চ আছেই, তাই গুগলকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে।

$ads={1}

আমেরিকায় আপনি আপনার পছন্দের সকল কোর্সই পেয়ে যাবেন। কম্পিউটার সায়েন্স, বায়োলজি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ফুড সায়েন্স, কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড রিসোর্সেস, ইলেকট্রনিক্স, মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সার্ভিসেস, মেরিন অ্যাফেয়ার্স, এগ্রিকালচার, ইকোনোমিক্স, অ্যাপ্লায়েড কম্পিউটার সায়েন্স, ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট, অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাসট্রোনমি, অ্যাপ্লায়েড জিওগ্রাফি, আর্কিটেকচারাল সায়েন্স, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, এডুকেশন, হোম ইকোনোমিক্স, মিউজিক, ফিলোসফি, হিস্ট্রি অ্যান্ড রিলিজিওন, ইংলিশ, ল, থিয়েটারসন প্রায় সব বিষয়েই আমেরিকায় পড়তে পারবেন। 

উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যাত্রা : আমেরিকায় পড়তে যাবার আদ্যোপান্ত
আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ : ছবি সংগৃহীত

আমেরিকার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা:

  • ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলোজি
  • স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
  • হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
  • ক্যালিফরনিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি
  • পেনিসিল্ভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
  • শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়
  • ইয়াল বিশ্ববিদ্যালয়
  • কলোম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
  • প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়
  • করনেল বিশ্ববিদ্যালয়


আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সময়সীমা ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস: 

আমেরিকায় সাধারণত ২টি সেশনে ভর্তি হওয়া যায়। একটি স্প্রিং (মার্চ, এপ্রিল, মে) অন্যটি উইন্টার (সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর)।

এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, আবেদনের কতদিন পর আপনাকে ফলাফল জানানো হবে? অর্থাৎ আপনি স্কলারশিপ বা ফান্ডিং সহ আপনার ঐ আবেদনকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন কি না, সেটা আপনাকে কত মাস পর জানাবে? এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মূলত মোটামুটি ৬ মাসের মতো সময় নিয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ৮ থেকে ৯ মাসের মতও হয়ে থাকে।


আমেরিকার ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:

১. পাসপোর্ট থাকতে হবে। 

২. একাডেমিক সার্টিফিকেট ও মার্কশীট থাকতে হবে (সব)। 

৩. আই-২০ লেটার বা এডমিশন লেটার থাকতে হবে। 

৪. টোফেল সার্টিফিকেট বা আইইএলটিএস সার্টিফিকেট থাকতে হবে। 

৫. জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট থাকতে হবে। 

$ads={2}

৬. ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট থাকতে হবে। 

৭. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট থাকতে হবে। 

৮. মেডিকেল ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকতে হবে। 

৯. ভিসা অ্যাপ্লিকেশন করতে হবে। ইনটেক শুরুর কমপক্ষে ৩ মাস আগে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। 

১০. অ্যাম্বাসি ফি ও সেভিকস ফি দিতে হবে।

১১. অ্যাম্বাসিতে ইন্টারভিউ ফেস প্রিপারেশন নিতে হবে। 

১২. টিউশন ফি পেমেন্ট রশিদ থাকতে হবে। 

১৩. বাৎসরিক টিউশন ফি আন্ডার গ্রাজুয়েশন প্রোগ্রামের জন্য প্রায় ১০,০০০-৩৭,০০০ ডলার। 

১৪. গ্রাজুয়েশন প্রোগ্রামের জন্য প্রায় ২৩,০০০-৮০,০০০ ডলার পুরো প্রোগ্রামের জন্য।

উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যাত্রা : আমেরিকায় পড়তে যাবার আদ্যোপান্ত
আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ : ছবি সংগৃহীত

আমেরিকায় পড়াশোনার খরচ ( টিউশন ফি) ও স্কলারশিপ:

স্নাতক পর্যায়ে পড়তে গেলে ন্যূনতম ২০ হাজার ডলার (প্রায় ১৯ লাখ টাকা) এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়তে হলে ন্যূনতম ১৭ হাজার ডলার (প্রায় ১৬ লাখ টাকা) খরচ হতে পারে। তবে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই সহশিক্ষা কার্যক্রম কিংবা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নানা হারে বৃত্তি দিয়ে থাকে। গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, বায়োলজি অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ, গবেষণাপত্র প্রকাশ, সম্মেলনে অংশগ্রহণ, বিতর্কচর্চা, ইন্টার্নশিপ বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা থাকলে আপনার বৃত্তি পাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে।


আমেরিকায় ভিসার জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ:

সব দেশের মত আপনি আমেরিকায় যেতে চাইলে আমেরিকায় পড়াশোনার খরচ বহন করার সক্ষমতা আপনাকে প্রমাণ করতে হবে। সে জন্য আপনাকে এমন কোন ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হবে যা দেখে এম্বাসি সন্তুষ্ট হয় যে, আপনি আপনার খরচ বহন করতে সক্ষম। তার মধ্যে আছে যেমন - 

১। ব্যাংক স্টেটমেন্ট

২। কোন স্পন্সর থাকলে সে ডকুমেন্ট

৩। অথবা স্কলারশিপ পেয়ে থাকলে সে ডকুমেন্ট

অর্থ্যাৎ আপনাকে এম্বাসিকে সন্তুষ্ট করতে হবে যে, আমেরিকায় যেয়ে আপনি আপনার পড়াশোনা ও থাকা, খাওয়ার খরচ নিজেই বহন করতে পারবেন। এবং পড়াশোনা শেষ করে আপনি দেশে ফিরে আসবেন। 


আমেরিকায় আবাসন ব্যবস্থা ও জীবন-যাপন খরচ:

আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানভেদে জীবনযাত্রার ব্যয় একেক রকম। টেক্সাস, অ্যারিজোনা, ওকলাহোমার মতো স্টেটগুলোয় জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলক কম। অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি বা জনবহুল স্টেটে জীবনযাত্রার ব্যয় কয়েক গুণ বেশি হয়।


আমেরিকায় পার্ট টাইম জব এর সুযোগ:

আমেরিকায় শিক্ষার্থীরা ২০ ঘণ্টা ‘অন ক্যাম্পাস’ কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং কর্মসূচির আওতায় পড়া শেষে ডিগ্রি–সংশ্লিষ্ট খাতে এক বছর কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট পেতে পারেন। কেউ যদি বিজ্ঞান, প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও গণিতসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়েন, তাহলে তিনি এ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় তিন বছর কাজের অনুমতি পেতে পারেন।

উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যাত্রা : আমেরিকায় পড়তে যাবার আদ্যোপান্ত
আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ : ছবি সংগৃহীত

আমেরিকায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ:

বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা, প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সংস্থা থেকে শুরু করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির নানা সুযোগ আছে। এ ছাড়া পড়ালেখা ও গবেষণায় ভালো করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক হিসেবে যুক্ত হওয়ার পাওয়া যায়।

$ads={1}

কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, বৃত্তি ও কাজের সুযোগ সম্পর্কে জানার ওয়েবসাইট:

https://www.ou.edu/admissions/affordability/scholarships

https://www.finaid.txstate.edu/scholarships/international.html

https://www.usd.edu/Admissions-and-Aid/Financial-Aid/Types-of-Aid/Scholarships

https://www.ohio.edu/admissions/tuition/international-scholarships

https://www.k-state.edu/isss/resources/scholarships_kstate.html


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন