কুড়িগ্রামে পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে ডিজেল ও পেট্রল উৎপাদন করে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন এক কলেজছাত্র। তার নাম, পারভেজ মোশাররফ (১৯)। সে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার মইদাম গ্রামের বদিউজ্জামানের ছেলে। পারভেজ মোশাররফ ভূরুঙ্গামারী উপজেলার মইদাম মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।
কলেজ ছাত্র পারভেজ মোশাররফ পরিত্যক্ত পলিথিন পুড়িয়ে উৎপাদিত ডিজেল ও পেট্রল বিক্রি করে বাড়তি আয়ও করছেন। তিনি প্রতি লিটার পেট্রল ১০০ টাকা ও ডিজেল ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন গ্রাহকদের কাছে।
তিনি বলেন, ড্রামের ভেতর পলিথিন রেখে তা আগুনের তাপে গলিয়ে বাষ্পের মাধ্যমে ডিজেল ও পেট্রল উৎপাদন করে থাকি। তবে পলিথিন থেকে পেট্রল ও ডিজেল উৎপাদন করতে প্রযুক্তি হিসেবে একটি রিফাইনারি মেশিনের দরকার পড়ে। স্বল্প পরিসরে উৎপাদন করতে বাড়িতেই রিফাইনারি মেশিন তৈরি করা যায়। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না হওয়ায় টিনের তৈরি ড্রাম, লোহা ও প্লাস্টিকের পাইপ, প্লাস্টিকের বয়াম ও কয়েকটি বোতল দিয়ে এই রিফাইনারি মেশিন তিনি নিজেই বানিয়েছেন বলে জানান।
এক কেজি পলিথিন থেকে প্রায় ৭৫০ গ্রাম জ্বালানি উৎপাদন হয় যার মধ্যে ৩০০ গ্রাম পেট্রল আর ৪৫০ গ্রাম ডিজেল বলে জানান পারভেজ মোশাররফ।
তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত পরিশোধিত জ্বালানি। সরকার যদি প্রতিটি জেলায় তেল পরিশোধন মেশিন দিয়ে সহায়তা করে তাহলে আমার মতো অনেক যুবকই এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। পরিত্যক্ত পলিথিন পরিবেশ নষ্ট করার অন্যতম উপাদান হিসেবে জানি আমরা। কিন্তু পলিথিন রিসাইকেল করে যদি এভাবে কাজে লাগানো যায় তাহলে একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে অন্যদিকে অর্থ উপার্জন সম্ভব হবে।
স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, পারভেজ মোশাররফ ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী। ইউটিউবে পরিত্যক্ত পলিথিন রিসাইকেল করে ডিজেল ও পেট্রল উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আগ্রহ জাগে তার। পরে নিজ বাসায় ২০১৯ সালে সরঞ্জামাদি কিনে শুরু করেন ডিজেল ও পেট্রল উৎপাদনের কাজ। ওই সময় আর্থিক সংকটের কারণে তেল উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। সম্প্রতি দেশে জ্বালানি তেল ডিজেল ও পেট্রলের দাম বেশি হওয়ায় আবার শুরু করেন উৎপাদন প্রক্রিয়া। সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে উদ্ভাবনী এ কাজের পরিধি আরো বাড়ানোর ইচ্ছা তার।
স্থানীয় কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, মাঠে সেচের জন্য ডিজেলচালিত পাম্পে নতুন উৎপাদিত ডিজেল ব্যবহার করছি। আমার মতো অনেক কৃষকই এখন এই ডিজেল ব্যবহার করছেন। এটি দামে সাশ্রয়ী ও মানেও ভালো। তাই এলাকার কৃষকের কাছে এই ডিজেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, উৎপাদনের প্রক্রিয়াটা কিভাবে হচ্ছে আগে আমাদের সেটা দেখা দরকার। কেননা পলিথিন পুড়িয়ে ডিজেল ও পেট্রল উৎপাদন করার প্রক্রিয়াটা পরিবেশবান্ধব কিনা দেখা দরকার।
পাইকেরছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মোশাররফের এই উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ার বিষয়টি শুনেছি। এভাবে তেল উৎপাদন করাটা যদি পরিবেশবান্ধব হয় তাহলে সে সহযোগিতা পাবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন