কানাডায় পড়তে আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী : ছবি-সংগৃহীত |
উচ্চশিক্ষা অর্জনে শিক্ষার্থীদের অধিক আগ্রহের দেশটির নাম হচ্ছে কানাডা। উত্তর আমেরিকার এই দেশটি বৃহৎ আয়তনের দিক দিয়ে সারাবিশ্বে রাশিয়ার পরেই অবস্থান। শিক্ষার মান, স্কলারশিপ প্রাপ্তি, বাৎসরিক টিউশন ফি, আবাসন সুবিধা, শিক্ষার্থীদের আয়ের পথ এবং শিক্ষাজীবন শেষে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগসহ অন্য বিষয়গুলো বিবেচনায় কানাডা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য অপার সম্ভাবনাময় দেশ। বর্তমানে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।
যারা বাইরের দেশে উচ্চশিক্ষার বিষয়ে ভাবছেন কিংবা কিভাবে শুরু করবেন আইডিয়া পাচ্ছেন না, তাদের জন্য আজ রয়েছে যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত
কানাডা-য় কেন পড়তে যাবেন:
কানাডা হচ্ছে বিশ্বের সপ্তম শান্তিপূর্ণ দেশ। এদেশের নাগরিক সুযোগ-সুবিধার অন্ত নেই বললেই চলে। তাই এখানের জীবন ব্যবস্থা অন্যান্য দেশের নাগরিকদের কাছে বেশ ঈর্ষণীয়।
শিক্ষার মানের ব্যাপারে বলতে গেলে, QS Ranking কিংবা The Times Higher Ranking সব জায়গাতেই রয়েছে কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শ্রেষ্ঠত্বের ছড়াছড়ি। গবেষণা ভিত্তিক পড়ালেখার মান অত্যন্ত উচ্চমানের হওয়ায় এদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট বিশ্বের যেকোনো দেশেই বেশ চাহিদা সম্পন্ন।
পড়ালেখা চলাকালীন পার্টটাইম চাকরি করার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া কো-অপারেটিভ পদ্ধতির মাধ্যমে সরাসরি যেকোনো কানাডিয়ান কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ, এমনকি ফুলটাইম চাকরিও পাওয়া যায়। এসব থেকে আয় করা অর্থ দিয়ে সহজেই শিক্ষার্থীরা সেমিস্টার ফি পরিশোধ করতে পারেন।
তাছাড়া মাল্টি-কালচার, সহজ ইমিগ্রেশন এবং শিক্ষা-পরবর্তী কাজের সহজ পলিসি থাকায় শিক্ষাজীবন শেষে চাকরিতে ঢোকার ৫ বছরের মধ্যেই রয়েছে স্থায়ী নাগরিক হওয়ার সুযোগ।
কানাডা-য় পড়তে যাবার জন্য নূন্যতম যোগ্যতা:
কানাডা-য় পরাশুনা করতে কমপক্ষে ৭০% নম্বরের প্রয়োজন পড়বে। কানাডায় ব্যাচেলর করতে আপনার HSC এ ভালো মার্ক্স ও IELTS এ ৬.০ কিন্তু কোন সাব-সেকশনে ৫.৫ এর নিচে পেলে চলবে না। আবার আপনি যদি মাস্টার্স প্রোগ্রামে যেতে চান, তাহলে ব্যাচেলরে আপনার ৭০% নম্বরের বেশি থাকতে হবে, IELTS এ থাকতে হবে ৬.৫, কিন্ত কোন সাব-সেকশনে ৬.০ এর নিচে নয়। ব্যাচেলরে অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ GRE / GMAT চাইতে পারে। কিন্তু স্কলারশিপ পেতে গেলে আপনার GRE/ GMAT থাকাটা আবশ্যকীয়। পিএইচডি প্রোগ্রামে অংশ নিতে মাস্টার্স থাকতে হবে এবং অন্যান্য যোগ্যতা মাস্টার্স করতে গেলে যেসব যোগ্যতা লাগে তার সমতুল্য।
কানাডা-য় কোন কোন ডিগ্রি নিয়ে পড়া যায়:
কানাডা-য় আপনি ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডি সহ সকল ধরণের প্রোগ্রামে যাবার সুযোগ আছে। কানাডায় মাস্টার্স কোর্স দুই ধরণেরঃ কোর্স-বেজড ও থিসিস-বেজড। কোর্স বেজড মাস্টার্স প্রোগ্রামে সাধারণত স্কলারশিপ পাওয়া যায় না। তবে থিসিস-বেজড মাস্টার্স প্রোগ্রামে গেলে আপনার ফান্ড বা স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ আছে।
কানাডা-য় পিএইচডি ডিগ্রির জন্য:
১. দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা
২. মাস্টার্স ডিগ্রি সনদ (থিসিসসহ)
৩. ব্যাচেলর ডিগ্রি সনদ (থিসিসসহ)
৪. গবেষণা পত্র (যদি থাকে)
৫. উচ্চ মাধ্যমিক সনদ
৬. মাধ্যমিক সনদ
৭. আইইএলটিএস স্কোর ন্যূনতম (৬.৫)
৮. GRE স্কোর (সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযোজ্য নয়)
৯. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার
১০. কর্মস্থল থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার
১১. স্টেটমেন্ট অব পারপাস (যেখানে এক্সট্রা কারিকুলার কাজগুলো উল্লেখ থাকতে হবে)
১২. সিভি
$ads={1}
কানাডা-য় মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য:
সাধারণত এই লেভেল-এ আসা সব ছাত্র ছাত্রী স্কলারশিপ এবং বিভিন্ন ফান্ডিং-এ আসে। টিএ (টিচিং এসিস্টেন্ট- ছাত্র ছাত্রীদের বিশেষ করে আন্ডার গ্রাড-দের সাহায্য করা), আর এ (রিসার্চ এসিস্টেন্ট- গবেষণায় সাহায্য করা) এবং বৃত্তি বা স্কলারশিপ এর টাকা মিলে সাধারণত যে টাকা অফার করে তাতে একা হলে নিজের টিউশন ফি, থাকা খাওয়ার খরচ চালিয়েও বাসায় টাকা পাঠাতে পারবেন। তবে ভর্তি অনেক প্রতিযোগিতা মূলক। শর্ত একটাই- এভারেজ সাধারণত এ- রাখতে হবে। এর চেয়ে কমে গেলে বেতন আবার পুরোটা দিতে হবে আপনাকে। তাই এই কথাটি মাথায় রেখে মন দিয়ে পড়লে আশা করি কোন সমস্যা হবেনা। আর যারা সামর্থ্য রাখেন খরচ করার কিন্ত রেজাল্ট ভাল নেই তারা নিজ খরচে আসতে পারেন।
কানাডা-য় ব্যাচেলর প্রোগ্রামের জন্য:
ব্যাচেলর ডিগ্রি নিতে আসাদের জন্য কানাডায় খুব বেশি সুবিধা নেই। অল্প কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাচেলর লেভেল এ স্কলারশিপ দেয়; যা মূল খরচ-এর চেয়ে অনেক কম। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় যারা বেশী বেতন রাখে তারা স্কলারশিপ দিয়ে রেগুলার বেতন-এর সমান করে দেয়ার মত সৌজন্য দেখায়। ভাল রেজাল্ট করলে ছোট খাট কিছু স্কলারশিপ পাওয়া যায়। একাধিক স্কলারশিপ পেলে চাপ অনেক কমে যায়- যা পাওয়া অনেক কঠিন। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়-এর পলিসি-তে বলাই থাকে শুধু মাত্র আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রী হওয়ার কারণে আপনি কোন স্কলারশিপ পেতে পারবেন না। এটা চেক করে নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে কিছু প্রোগ্রামে কো-ওপ নামে একটি অপশন অফার করে। এটি অনেকটা ইন্টার্নশিপ-এর মত। তবে কোম্পানীগুলো পে করে এবং বেশ ভাল অঙ্কের। তবে কো-অপ-এ ঢুকতে হলে অনেক ভাল সিজিপিএ লাগে। একটি অতিরিক্ত কোর্স এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরীক্ষা দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়-কে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় ফি বাবদ- তবে যা আসে তা অনেক সাহায্য করে।
এ ছাড়াও অফ ক্যাম্পাস ওয়ার্ক পারমিট-এর সুবিধা আছে। এই সুবিধা পেতে অবশ্য প্রায় এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। ৬ মাস ফুল টাইম পড়া শুনার পরে আপনি এপ্লাই করতে পারবেন, কিন্তু কাগজ যোগাড় করতে সময় লাগায় মোট ৭-৮ মাস লেগে যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশ-কে সন্দেহজনক দেশ-এর তালিকায় যুক্ত করায় প্রসেসিং সময় ১৫ দিনের বদলে কমপক্ষে ৩ মাস লাগে। সব মিলিয়ে প্রায় এক বছর অপেক্ষা করতে হবে কাজ করার পারমিশন-এর জন্য। এর আগে ক্যাম্পাসের বাইরে কাজ করা অবৈধ। তার আগে এবং পরে অন ক্যাম্পাসে ২০ ঘন্টা কাজ করতে পারেন- যা পাওয়ার সম্ভাবনা শুরুর দিকে খুবই ক্ষীণ। তবে অফ/অন ক্যাম্পাস কাজ করে থাকা খাওয়ার খরচ তোলা সম্ভব।
মূলত যারা কমপক্ষে পুরো ৩ বছরের টিউশন ফি + প্রথম বছরের থাকার খরচ দেয়ার মত টাকা দিতে সক্ষম ব্যাচেলর এ শুধু তাদের আসা উচিত। কারণ কানাডা-তে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পণ্যের মত দেখা হয়। কানাডা-র জাতীয় রপ্তানীর একটি বড় অংশ হল শিক্ষা। এখানকার ব্যবস্থা এমন ভাবে করে রাখা আছে যে আপনি কোন আর্থিক সমস্যায় পড়লে সাহায্য করার কেউ নেই। আবার টাকার অভাবে ক্লাস না করলে আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট দিবেনা। তাই সবদিক থেকে বিপদ। একবার এরকম অবস্থায় পড়লে তা থেকে বের হওয়া কঠিন- অনেকটা অসম্ভব ও। তাই যদি আর্থিক সঙ্গতি না থাকে তাহলে বাংলাদেশ থেমে ব্যাচেলর শেষ করে আসুন। পোস্ট গ্রাড বা মাস্টার্স এ এখানে অনেক সুবিধা।
কানাডা-য় ফাউন্ডেশন কোর্সের জন্য:
নিম্নে দেয়া কাগজপত্রের দরকার হবে।
১. উচ্চ মাধ্যমিক সনদ
২. মাধ্যমিক সনদ
৩. আইএলটিএস স্কোর ন্যূনতম ৫
৪. কলেজের দু’জন শিক্ষকের কাছ থেকে দুটি রিকমেন্ডেশন লেটার
৫. স্টেটমেন্ট অব পারপাস (কেনো পড়তে যাচ্ছেন এবং কেনো এ ই কোর্স পছন্দ করেছেন সেটা উল্লেখ করতে হবে)
৬. সিভি
কানাডায় কোর্স ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন:
বিশ্বে অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় এই কানাডায় অবস্থিত। তাইতো, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ লোক বিদ্যার্জনের আশায় পাড়ি জমায় কানাডায়।
কানাডায় আবেদন করার সময় অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ভালো করে দেখে নেয়ার চেষ্টা করবেন। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও র্যাঙ্কিং বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটের উপর নির্ভর করা উচিত নয়। অনেক সময় ওয়েবসাইটে কিছু Misleading তথ্য দেওয়া থাকে- যা শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে। অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়ে অনেক টাকা খুইয়ে ফেলেন। তাই, সবসময় বিভিন্ন সোর্স থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সমন্ধে জানার চেষ্টা করুন। আর গুগল সার্চ আছেই, তাই গুগলকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন কানাডার বিশ্ববিদ্যয় সম্পর্কে জানতে।
কানাডায় পড়াশুনার মাধ্যম ইংরেজী ও ফ্রেঞ্চ। আবেদনের সময় অবশ্যই আপনাকে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিতে হবে আপনি কোন মাধ্যমে পড়তে চান।
কানাডায় আপনি আপনার পছন্দের সকল কোর্সই পেয়ে যাবেন। কম্পিউটার সায়েন্স, বায়োলজি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ফুড সায়েন্স, কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড রিসোর্সেস, ইলেকট্রনিক্স, মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সার্ভিসেস, মেরিন অ্যাফেয়ার্স, এগ্রিকালচার, ইকোনোমিক্স, অ্যাপ্লায়েড কম্পিউটার সায়েন্স, ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট, অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাসট্রোনমি, অ্যাপ্লায়েড জিওগ্রাফি, আর্কিটেকচারাল সায়েন্স, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, এডুকেশন, হোম ইকোনোমিক্স, মিউজিক, ফিলোসফি, হিস্ট্রি অ্যান্ড রিলিজিওন, ইংলিশ, ল, থিয়েটারসহ আন্ডার র্গ্যাজুয়েট পর্যায়ে প্রায় দশ হাজার বিষয় এবং পোস্ট র্গ্যাজুয়েট পর্যায়ে প্রায় তিন হাজার বিষয় পড়তে পারবেন।
কানাডা-র কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা:
সেরা ৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়
১) University of Toronto
২) Mcgill University
৩) University of British Columbia
৪) Mcmaster University
৫) University of Alberta
৬) University of Waterloo
কানাডা-য় মধ্যম সারির বিশ্ববিদ্যালয়
৭) Ottawa University
৮) University of Western Ontario
৯) York University
১০) University of Montreal
১১) Dalhousie University
১২) Carleton University
১৩) Queens University
১৪) Simon Fraser University
১৫) University of Manitoba
১৬) University of Victoria
১৭) Memorial University
১৮) University of Saskatchewan
কানাডা-র বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সময়সীমা ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:
সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে আপনার ভর্তি কার্যক্রম নিশ্চিত করে। তাই হাতে ১ বছর সময় নিয়ে আবেদন করা উচিত। মনে রাখবেন, আপনার পড়াশুনার মাঝে গ্যাপ ২ বছরের বেশি হলে আপনি বিপদে পড়তে পারেন। তাই এই বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
কানাডা-য় বছরে তিন ভাগে, তিন সেমিস্টারে ভর্তি নেয়:
১। ফল (সেপ্টেম্বর- ডিসেম্বর): এটাকেই একাডেমিক ইয়ার-এর (শিক্ষা বর্ষের) শুরু ধরা হয়। সাধারণত সব ছাত্র ছাত্রীকে এই সেমিস্টারে ভর্তি করা হয়। ভর্তির আবেদন-এর সময় বিশ্ববিদ্যালয় অনুসারে আলাদা। সাধারণত আন্ডার গ্রাড লেভেল-এ জুন-এর দিকে এবং পোস্ট গ্রাড লেভেল-এ মার্চ-এপ্রিল-এর দিকে। উল্লেখ্য, ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা না করাই ভাল।
২। উইন্টার (জানুয়ারী-এপ্রিল): আন্ডার গ্রাড লেভেল-এ অনেকেই উইন্টারে ছাত্র ছাত্রী ভর্তি করে। পোস্ট গ্রাডে এই সেমিস্টারে খুব বেশী নতুন শিক্ষার্থী নেয়া হয় না। তারপরেও চেষ্টা করতে পারেন। ভর্তির শেষ সময় অগাস্ট থেকে সেপ্টেম্বর-এর মধ্যে।
৩। সামার (মে- অগাষ্ট): এই সময় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর ছুটি থাকে। বিশেষ করে যারা আন্ডার গ্রাড লেভেল-এ পড়ে। পোস্টগ্রাড-দের গবেষণা অথবা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। উল্লেখ্য বেশীর ভাগ ছাত্র ছাত্রী যারা এখানে বাংলাদেশ থেকে পোস্ট গ্রাড লেভেল-এ পড়তে আসে, তারা রিসার্চ ফান্ড থেকে সাহায্য পায়- বিনিময়ে অধ্যাপক ইচ্ছামত খাটিয়ে নেন।
নিচে কানাডা-য় ভর্তি আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিয়া দেওয়া হলঃ
১। সকল একাডেমিক সার্টফিকেট এবং মার্কশীট
২। CV, মোটিভিশন লেটার ও রিকমেন্ডেশন লেটার
৩। Statement of Purpose (SOP)
৪। পাসপোর্টের কপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি
৫। রেফারেন্স লেটার- এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনার সম্পর্কে ভালো রিমার্ক্স থাকতে হবে।
৬। IELTS এবং প্রয়োজনে GRE/GMAT
৭। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র
কানাডায় পড়াশোনার খরচ ( টিউশন ফি) ও স্কলারশিপ:
এখন পড়ালেখার খরচ-এ আসা যাক। প্রতি একাডেমিক ইয়ার-এ বিশ্ববিদ্যালয় ফি বাবদ খরচ প্রায় ১৫,০০০ থেকে ২৮,০০০ কানাডিয়ান ডলার পর্যন্ত। ইমিগ্রেন্ট বা সিটিজেন-দের জন্য এ খরচ ৪,০০০ থেকে ৭,৫০০ ডলার পর্যন্ত। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার আরো অনেক কম বেতন (৮-১৪ হাজার ডলার)। সাধারণত এসব বিশ্ববিদ্যালয় একটু ছোট শহরে অবস্থিত হয়। তাই ক্যারিয়ার-এর দিকে সুবিধা কম থাকে। কিন্তু ভাল দিক হল খরচ অনেক কমে যায়।
কানাডা প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। তাছাড়া একাডেমিক রেজাল্টের উপরও শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পেয়ে থাকেন। ছাত্র-ছাত্রীরা সহজেই এসব স্কলারশিপের মাধ্যমে টিউশন ফি ছাড়াই ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারেন।
কানাডা-য় কিছু জনপ্রিয় স্কলারশিপের নাম হচ্ছে –
১. ভেনিয়ার কানাডা গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ
২. আইডিআরসি ডক্টরাল রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড
৩. ইন্ডাস্ট্রিয়াল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ
৪. রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট স্কলারশিপ
৫. স্টেট স্কলারশিপ
৬. প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ
৭. ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ
কানাডা-য় থাকার খরচ:
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস-এ থাকতে হলে ডর্মে (বাংলাদেশে হল-এর অনুরূপ) থাকতে হবে। খরচ হবে প্রতি চারমাসে ৩,০০০ থেকে ৭,০০০ ডলার পর্যন্ত- সুযোগ সুবিধার উপর ভিত্তি করে। খাওয়ার খরচ মিল প্লান-এ আলাদা ভাবে কিনতে হবে- ডর্মে থাকলে সেটা সাধারণত বাধ্যতা মূলক। ডর্মে থাকা বাঙ্গালী শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল খাওয়া। মোদ্দা কথা ডর্মে থাকা অনেক ব্যয়বহুল- কিন্তু ঝামেলা মুক্ত।
কানাডা-য় যারা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন তাদের খরচ সাধারণত এমন হয়ে থাকে:
১। বাসা ভাড়া: ২৫০- ৮০০ ডলার (শেয়ার করে থাকলে কম খরচ)
২। যোগাযোগ: বাস পাস (৬০$-১৫০$) অনেক প্রভিন্স-এ শিক্ষার্থীদের বাস পাস ফ্রি। (যেমন আলবার্টা)
৩। খাওয়া: বাসায় রান্না করলে ১০০-২০০$; বাইরে খেলে: ৩০০-৬০০$
৪। ফোন এবং ইন্টারনেট: শেয়ার করলে খরচ অনেক কমে যায়। কমপক্ষে ৫০-১০০$ ধরে রাখুন।
(উল্লেখ্য: শহর থেকে শহর-এ আলাদা হতে পারে। আপনার থাকার উপর-ও নির্ভর করে। উপরের খরচ একজনের মোটামুটি থাকার মত খরচ।)
কানাডায় যেতে আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ:
কানাডায় পড়ালেখার জন্য শক্ত পৃষ্ঠপোষক দেখাতে হয়। শিক্ষার্থীকে তাঁর পৃষ্ঠপোষকের ন্যূনতম ৩০ লাখ টাকা ব্যাংক হিসাব দেখাতে হবে এবং এই টাকা ন্যূনতম ৬ মাস থেকে এক বছর ব্যাংকে থাকতে হবে।
যদি স্পন্সর (মা অথবা বাবা) থাকে, তাহলে তার ট্যাক্সের কাগজ-পত্র ও ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে হবে।
কানাডায় ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:
ভিসা পেতে আপনাকে দ্বারস্থ হতে হবে ঢাকায় অবস্থিত কানাডিয়ান এম্বেসী-এর। আপনার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত অফার লেটার ও প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সমেত আবেদন করতে হবে ভিসার জন্য।
নিচে কাগজপত্রের জন্য প্রয়োজনীয় তালিকা দেওয়া হলঃ
১। পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফর্ম
২। পাসপোর্ট ও ফটোগ্রাফ
৩। CV, Statement of Purpose (SOP) ও রেফারেন্স
৪।সকল মার্কশিট ও সনদ, IELTS-GRE সনদ
৫। No Objection Certificate [শেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে]
৬। অফার লেটার
৭। ব্যাংক সলভেন্সি পেপ্যার
৮। ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
৯। পুলিশ ক্লিয়ারান্স
১১। হেলথ ইন্স্যুরেন্স ও মেডিক্যাল রিপোর্ট
সব কিছু ঠিকমত সাজিয়ে নিয়ম অনুযায়ী জমা দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে অনেক ছোট ভুলের জন্যই ভিসা রিজেক্ট হয়ে যায়।
কানাডায় পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব এর সুযোগ:
কানাডায় পার্ট টাইম জবের সুযোগ রয়েছে সপ্তাহে ২০ ঘন্টা। ব্যাচেলর স্টুডেন্টদের প্রথম ১ বছর জব করার সুযোগ থাকেনা। তবে ব্যাচেলরের স্টুডেন্টগণ চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে TA, RA, Office Assistance- হিসেবে জব করতে পারে। কিন্তু মূলত এই জবগুলো মাস্টার্স বা পিএইচডি-এর শিক্ষার্থীদের অফার করা হয়।
$ads={2}
কানাডায় পড়াশোনা শেষে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ:
পড়াশুনা শেষ করে শিক্ষার্থীরা ১-৩ বছরের ওয়ার্কপারমিট পান এবং পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে আবেদন করতে পারেন। কানাডার প্রভিন্সগুলোর মধ্যে সাসকাচুয়ান, ম্যানিটোবা, নিউ ফাউণ্ডল্যান্ড এ্যাণ্ড ল্যাব্রাডরে শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে আবাসনের সুযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে অন্টারিও প্রভিন্সের মাস্টার্স প্রোগ্রাম কমপ্লিট করার পরেও একজন শিক্ষার্থী স্থায়ীভাবে থেকে যাবার জন্যে আবেদন করতে পারেন। সম্প্রতি রুরাল এ্যাণ্ড নর্দার্ন পাইলট প্রোগ্রামটিও শিক্ষার্থীদেরকে আশার আলো দেখাচ্ছে।
কানাডায় যেতে কিছু প্রয়োজনীয় কিছু ওয়েবসাইট এর ঠিকানা:
১। http://www.ouac.on.ca/ - এটি অন্টারিওর বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ভর্তির অনলাইন সাইট। এটার মাধ্যমে এপ্লাই করতে পারেন অথবা সরাসরি এপ্লাই করতে পারেন। এটা নির্ভরযোগ্য। খরচ একটু বেশী- কিন্তু টাকা কোথায় ঢাললেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবেনা এবং অনলাইনে আপনার ভর্তির স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন। এপ্লাই করার পর এই সাইট নিয়মিত চেক করা উচিত। গুরুত্বপূর্ণ: সঠিক ফরম পূরণ করবেন।
২। http://www.aucc.ca/index_e.html কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাইট। এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবেন। কিন্তু সব সঠিক নয় (কিছুটা এদিক সেদিক)।
৩। http://oraweb.aucc.ca/dcu_e.html - প্রোগ্রাম অনুসারে সার্চ করে, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর একটি লিস্ট বানাতে পারেন।
৪। http://cic.gc.ca/english/study/index.asp - সরকারী সাইট- এখানে স্টাডি পারমিট এবোং পড়াশুনা বিষয়ক সব ধরণের ফর্ম এবং সরকারী সিদ্ধান্ত জানতে পারবেন।
৫। http://www.studyincanada.com/english/index.asp আরেকটি উপকারী সাইট।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন